চোখের পাতা কাঁপে-কী করবেন?

চোখের পাতা লাফানো কিংবা চোখের পাতা কাঁপা কোন সমস্যা কিনা এই প্রশ্ন অনেককেই ভাবায়। অনেকেই চোখের পাতা কাঁপার সমস্যায় ভোগেন। সমস্যাটি নিজে নিজে ভালোও হয়ে যায় কিছু সময় পর। কারও কারও আবার সমস্যাটি আরো কয়েক দিন স্থায়ী হয়। চোখের পাতা কেন কাঁপে এবং চোখের পাতা লাফালে করণীয় কী -এসব নিয়ে আজকের পোস্ট। 

চোখের পাতা কাঁপা
চোখের পাতা কাঁপা বা লাফানো একটি সাধারণ সমস্যা। ছবি: পিক্সেলস


ডান চোখ লাফলে কী হয়? কিংবা বাম চোখ লাফালে কী হয়? এমন সব প্রশ্ন এবং এর কিছু আশাবাদী এবং হতাশাবাদী উত্তর আমাদের সমাজে প্রচলিত। আমরা এ সমস্যার সঠিক কারণ ও প্রতিকার জানার চেষ্টা করব।

চোখ কাঁপার সমস্যা দেখা দিলে এমনকি মাসও পেরিয়ে যেতে পারে। সাধারণত এক চোখের পাতাই লাফাতে দেখা যায়। ডান কিংবা বাম চোখ লাফায়। চোখের ওপরের পাতা কিংবা নিচের পাতা, যেকোনোটিই লাফাতে পারে এবং এটি শুরু হয় হঠাৎ করে। চোখের পাতা লাফানোর সঙ্গে অন্য কোনো উপসর্গ না থাকলে এ নিয়ে খুব একটা ভাববার প্রয়োজন নেই-যদিও চোখ লাফনোর সময়ে হওয়া অনুভূতিটি বেশ অস্বস্তিকর।

পড়ুন: চোখ লাল হলে কখন যাবেন চিকিৎসকের কাছে?

চোখ লাফানোর অবস্থা

অবস্থা

বর্ণনা

কতদিন ধরে চোখ লাফায়

৪/৫ দিন। কখনো কখনো ৩০ দিন স্থায়ী হতে পারে।

কোন চোখ লাফায়

ডান চোখ লাফায়।

অথবা

বাম চোখ লাফায়।

কীভাবে চোখ কাঁপা শুরু হয়

হঠাৎ করে চোখ লাফাতে শুরু করে।

বিরতি দিয়ে পরে আবার লাফায়।

 

চোখের পাতা কেন লাফায়

চোখের পাতা লাফানোর বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এসব কারণের মধ্যে কিছু খুব সাধারণ এবং কিছু দ্রুত পরিহারযোগ্য। চোখের পাতা কাঁপার কারণগুলো নিম্নরূপ:

১. ক্লান্তি কিংবা অতিরিক্ত কাজের চাপ বা দুশ্চিন্তা। 

২. চা-কফি কিংবা অ্যালকোহল গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।

৩. উজ্জ্বল আলোয় থাকা বা দীর্ঘক্ষণ বেশি আলোয় কাজ করা।

৪. চোখে বা চোখের পাতার ভেতরের অংশে কোনো ক্ষতিকর বস্তু বা অন্য অস্বস্তিকর কিছু পড়লে বা আটকে গেলে।

৫.  বায়ূ দূষণকারী নানা পদার্থ, বাতাসের প্রবাহ কিংবা ধূমপান।

৬. চোখের বিভিন্ন অংশের প্রদাহ কিংবা চোখের স্বাভাবিক পানি শুকিয়ে যাওয়ার উপসর্গ হিসেবেও কারও কারও চোখের পাতা কাঁপে। 

৭. ব্যবহার করা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চোখের পাতা কাঁপতে পারে।

চোখের পাতা লাফালে কী করবেন?

প্রথম কাজ হলো-চোখের পাতা কাঁপলে ভয় পাবেন না। বোঝার চেষ্টা করুন যে-কেন এমনটি হচ্ছে, আপনি কি অতিরিক্ত মানসিক চাপে আছেন? বা খুব কাজের চাপে দিন কাটছে আপনার? আপনি এসব  চাপ কমানোর চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে কাজকে একটু ছুটি দিন। গভীর ঘুম দিন। রাতে ঘুমের সময় বাড়ান। চা-কফির পরিমাণ বেশ খানিকটা কমিয়ে দিন। অ্যালকোহল বাদ দিন এবং ধূমপান ছেড়ে দিন ধীরে ধীরে। 

ঘরের বাতাসে ধুলোর পরিমাণ কমান। গোসলের পানি পরিষ্কার দেখে সংগ্রহ করুন।

বাইরে গেলে সানগ্লাস ব্যবহার করতে পারেন-এতে বাতাসের প্রবাহ কিংবা বাতাসের দূষণকারী পদার্থ সরাসরি চোখের সংস্পর্শে আসতে পারবে না। এরপর যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে ভিন্ন চেষ্টা করতে হবে।

আরো পড়ুন: চুলে কতদিন পরপর শ্যাম্পু করবো?

চক্ষু বিশেষজ্ঞের নিকট যাওয়ার প্রয়োজন হয় কখন?

স্বাস্থ্যের নানা সমস্যার মত চোখের পাতা কাঁপাও একটি সমস্যা-যদি এটি দীর্ঘদিন ধরে ভোগায়। দুই–এক সপ্তাহের ভেতর চোখের পাতা লাফানোর সমস্যাটি সেরে না গেলে এটি সমস্যা। কখন চিকিৎসকের নিকট যাবেন-জানুন।

♦ যদি খেয়াল করেন যে-  চোখের পাতা কাঁপার সময় পুরো চোখ বন্ধ হয়।

♦ চোখের পাতা খুলতে সমস্যা হলে কিংবা চোখের পাতা নিজ থেকেই বন্ধ হয়ে গেলে।

♦ চোখের পাতা লাফানোর সময় মুখ লাফালে বা দেহের অন্য কোনো অংশ ওভাবে লাফিয়ে উঠলে।

♦ চোখের বিভিন্ন অংশ ফুলে গেলে।

♦ চোখের ভেতরটা লাল হয়ে গেলে।

♦ চোখ থেকে পানি বা এ রকম তরল কিছু ঝরলে।

আরো পড়ুন: মূলা শাক খেলে কী হয়?

চোখের যত্ন নেওয়ার সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। চোখ কাঁপা কমাতে হলে পর্যাপ্ত ঘুম, টেনশন কমানো এবং দীর্ঘসময় ধরে ব্যাকলাইটযুক্ত ডিভাইস যেমন কম্পিউটার বা স্মার্টফোন ব্যবহার কমাতে হবে। ভিটামিন এ যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। সমস্যা গুরুতর মনে হলে  চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চোখের পাতা লাফানোর সঙ্গে স্নায়বিক রোগের সম্পর্ক থাকে। চিকিৎসা নিলে চোখের পাতা লাফানোর সমস্যা ভাল হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form