তরকারিতে মসলা মিশিয়ে খাওয়া ভাল। তবে রান্নায় বেশি মসলা দেওয়া কিন্তু স্বাস্থ্যকর নয়। এরকমই অভিমত পুষ্টিবিজ্ঞানীদের। খাবারের মান ঠিক রাখতে হলে মসলার পরিমাণ ঠিক রাখা জরুরি। পাশাপাশি, তরকারির স্বাদের বিষয়টিও অবহেলা করার মত নয়। তরকারিতে কম মসলা দিলেও যে তার স্বাদ বাল রাখা যায় সেরকম কিছু রেসিপি নিয়ে আজকের পোস্ট।
চার রেসিপি: কম মসলায় বেশি স্বাদের তরকারি
যখন একসঙ্গে মাছ ও কুমড়া
যা কিছু লাগবে: যে কোনো মাছের টুকরো ৪-৫টি, কুমড়া ত্রিকোণ করে কাটা ৮-১০ টুকরা, সবুজ রঙ্গের কাঁচামরিচ কুচি, ধনিয়াপাতা, কালো জিরা ১/২ চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি ২-৩টি, তাজা টমেটো কুচি করে কাটা, ভাল মানের সরিষার তেল ১ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া ১/২ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১/২ চা চামচ, লবণ পরিমাণ মতো বা স্বাদমতো।
যেভাবে এই রান্না করবেন: একটি ফ্রা প্যানে সরিষার তেল পরিমাণ মতো গরম করে কালো জিরা, কাঁচামরিচ ফোড়ন দিয়ে কেটে রাখা পেঁয়াজ কুচি ও তাজা টমেটো কুচি দিন। হলুদ-মরিচ গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। ফালি করে কেটে রাখা হলুদ কুমড়া দিন। খানিকটা উষ্ণ গরম পানি দিয়ে কড়াই ঢেকে রাখুন। ঢাকনা খুলে হলুদ-মরিচ মাখানো সুন্দর মাছের টুকরাগুলো দিন। মাছ দেওয়ার পর আবারও কড়াইয়ে ঢাকনা দিয়ে রাখুন। পরে ঢাকনা খুলে ওপরে ধনিয়াপাতা কুচি দিয়ে মিষ্টি কুমড়া দিয়ে মাছের ঝোল গরম গরম পরিবেশন করুন।
চিচিঙ্গা ভাজিতে অল্প মসলা
যা কিছু লাগবে: চিচিঙ্গা ২-৩টি কুচি, মরগির ডিম বা হাঁসের ডিম ২টি, পেঁয়াজকুচি ৪-৫টি, আদা ও রসুন বাটা আধা চা চামচ, হলুদ ও জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ করে, শুকনো লাল মরিচ গুঁড়া আধা চা চামচ, তেজপাতা ২টি, তেল ও লবণ পরিমাণ মতো বা স্বাদ মতো।
যেভাবে এই রান্না করবেন: সবুজ চিচিঙ্গা ধুয়ে পানি চেপে নিন, ডিমটাকে ফেটিয়ে রাখুন।
কড়াইতে তেল গরম করে খসখসে তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে ঝাঁঝযুক্ত পেঁয়াজ দিন। পেঁয়াজ নরম হলে অল্প পরিষ্কার পানিতে সব বাটা ও গুঁড়া মসলা কষিয়ে নিন। ভালো করে মসলা কষিয়ে ফেটানো ডিম দিয়ে নাড়তে থাকুন। ডিম ঝুরঝুর হলে চিচিঙ্গা মিশিয়ে কড়াইয়ে ঢাকনা দিয়ে আগুন চালু রাখুন। চিচিঙ্গা সিদ্ধ হয়ে তেল ছেড়ে এলে নামিয়ে নিন এবং একটু ঠাণ্ডা হলে খান।
টক মিষ্টি পুরে আস্ত বেগুন
যা কিছু লাগবে: গোল বেগুন আস্ত ২টি, মিক্সড সবজি ১ কাপ, তেঁতুল এক টেবিল চামচ, টকদই এক টেবিল চামচ, চিনি স্বাদমতো, লবণ পরিমাণ অনুযায়ী, পেঁয়াজ বাটা এক টেবিল চামচ, হলুদ ও মরিচ গুঁড়া এক চা চামচ, রসুন কুচি তিন কোয়া, তেল যতটুকু লাগে নিন, ধনিয়া ও জিরা গুঁড়া এক চা চামচ, পাঁচফোড়ন আধা চা চামচ।
যেভাবে এই রান্না করবেন: কালো বেগুন উপরের অংশ কেটে কুরিয়ে নিন। সবজিগুলো ছোট করে কেটে উপকরণ অল্প তেলে দিয়ে রান্না করে নিন। বেগুন হলুদ, মরিচ ও লবণ মেখে সয়াবিন তেলে একটু স্টিম করে নিন। কালো বেগুনের ভেতর সবজির পুর ও সব উপকরণ দিয়ে হালকা আঁচে রান্না করতে হবে বা ওভেনে ১৬০ ডিগ্রিতে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন।
বাটা মসলায় মুরগির ঝোল
যা কিছু লাগবে: মুরগির ঝোল খেতে মজাদার। ১টি মুরগি ছোট করে কাটা, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ বাটা ১ চামচ, গোলমরিচ বাটা ১/২ চা চামচ, গরম মসলা বাটা ১/২ চা চামচ, জায়ফল-জয়ত্রী বাটা ১/২ চা চামচ, দারুচিনি বাটা ১টি, এলাচি ৪টি, লবঙ্গ ৪টি, তেজপাতা ২টি, হলুদ বাটা ১/২ চা চামচ, টমেটো বড় করে কাটা ১ কাপ, লবণ যা লাগে, মাঠা ৪ কাপ, মিষ্টি দই ২ টেবিল চামচ, খাঁটি সরিষার তেল ১ টেবিল চামচ।
যেভাবে এই রান্না করবেন: নিয়মানুযায়ী জবাই করা তাজা মুরগি পরিষ্কার করে পছন্দমতো টুকরা করে হলুদ, লবণ, দই ও মাঠা দিয়ে মাখিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট বাটিতে রাখুন। হাঁড়িতে তেল, পেঁয়াজ, আদা ও রসুন বিছিয়ে মুরগির মাংস সমান করে দিন। গরম মসলার গুঁড়া বাদে বাকি সব উপকরণ পর্যায়ক্রমে দেওয়ার পর ২ কাপ পানি দিয়ে ঢেকে দিন হাঁড়ির সবকিছু। ঢাকনার ওপর গরম পানির হাঁড়ি বসিয়ে ১ ঘণ্টা অল্প জ্বালে রান্না করুন। ঝোল কমে এলে গরম মসলার গুঁড়া দিয়ে আরও কিছুক্ষণ উনুনে রাখুন, ঝোল কমে মাখা মাখা হলে নামিয়ে নিন এবং একটু ঠাণ্ডা হলে খান।
পড়ুন: আইস প্ল্যান্টে যখন প্রথম ফুল হয়।
শেষ কথা
উপসংহারে বলা যায়, তরকারিতে অল্প ঝাল খান। এটি আপনার পেটকে ভাল রাখবে। অনেকেরই বেশি মসলা দেওয়া তরকারিতে সমস্যা হয়। বিশেষ করে পেট ফেঁপে যাওয়া ও ঢেকুর ওঠার মত সমস্যা গুলো ঝাল তরকারি খেলে হয়। মসলা দেওয়া তরকারি খেতে মজা। মসলা অল্প পরিমাণে হলে স্বাস্থ্যগত কিছু উপকারও আছে।