শুল্ক ছাড়া যেটুকু স্বর্ণ বিদেশ থেকে আনা যায়

প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রায় রেমিট্যান্স না এনে স্বর্ণ আনে। এতে  অফিশিয়াল চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে। ব্যাগেজ রুলের যে সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে প্রবাসীরা-তা সংশোধন চায় সংশ্লিষ্টরা।
gold
Gold. Image: Pexels


১০০ গ্রাম বা (সাড়ে ৮ ভরি) ওজনের স্বর্ণালংকার বিদেশ থেকে আনা যায়। বর্তমান ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী এজন্য কোন শুল্ক-কর দিতে হয় না প্রবাসীকে। তবে এক ধরনের অলংকার ১২টির বেশি আনতে দেওয়া হয় না। এছাড়াও একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় ২৩৪ গ্রাম (২০ ভরি) ওজনের সোনার বার আনতে পারেন, এক্ষেত্রে ভরিপ্রতি ২ হাজার টাকা করে শুল্ক দিতে হয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি স্বর্ণের বার আনতে ৪০ হাজার টাকা অতিরিক্ত গুনেন যাত্রীরা।

তবে আগামী বাজেটে ব্যাগেজ রুলে সংশোধন আনা হচ্ছে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবাসীকর্মী বা বিদেশফেরত যাত্রীরা একটি স্বর্ণের বার (১৫০ গ্রাম) দেশে নিয়ে এলে সেটির জন্য কোনো শুল্ক দিতে হবে না।  বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি উৎসাহিত করতে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

স্বর্ণালংকার ও স্বর্ণের বার আমদানির প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেড়ে গেছে। প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের বদলে দেশে স্বর্ণের বার পাঠাচ্ছেন যা দেশের জন্য ভাল নয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে যাত্রীরা সোনার ক্যারিয়ার (বাহক) হিসাবেও ব্যবহৃত হচ্ছেন। ব্যাগেজ রুলে বৈধতা থাকায় এর সুযোগে দেশে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ কমে গেছে। 

২০২০ সালে সাড়ে ৫ টন স্বর্ণ বাংলাদেশে এসেছে। ২০২২ সালে প্রায় ৫৪ টন (প্রায় ৪৬ লাখ ভরি) স্বর্ণ ঢাকায় আনা হয়েছে, ২০২১ সালের তুলনায় যা ৫৩ শতাংশ বেশি। যার হালনাগাদ বাজারমূল্য ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টমস এ সোনা প্রবেশের তথ্য রেখেছে।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে গত বছর  বলা হয়েছে, ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনতে প্রবাসে কর্মরত একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। দেশে ফিরে আসার সময় প্রবাসী শ্রমিকরা ক্যারিয়ার গ্রুপ হিসাবে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে স্বর্ণ বহন করেন। অথবা সিন্ডিকেট প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার তুলনামূলক বেশি দামে কিনে নিয়ে ওই দেশেই স্বর্ণের দেনা দেন এবং বাড়তি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণ নিয়ে দেশে ফিরত পাঠায়। এতে আরও বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রায় রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে স্বর্ণ আনলে প্রবাসীরা কয়েকভাবে মুনাফা ঘরে তুলছেন। প্রথমত, তারা কম দামে স্বর্ণ এনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে ব্যাংকের চেয়ে বেশি দাম পাচ্ছেন। তৃতীয়ত, রেমিট্যান্সের অর্থ পেতে প্রবাসীকে কোনো বাড়তি অর্থ গুনতে হয় না।

প্রতিবেদনে সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার কারণ ব্যাখ্যা করে বলা হয়, বাইরের দেশে বাজারে ২৪ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দেশভেদে ৫৮ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। বিমানবন্দরে ২ হাজার টাকা শুল্ক দেওয়ার পর স্থানীয় বাজারে সেই স্বর্ণ প্রতি ভরি ৭২ থেকে ৭৮ হাজার টাকা হয়ে যায়। এতে প্রতি ভরিতে মুনাফা ১০-১৫ হাজার টাকা থাকে।

ব্যাগেজ রুল সংশোধনের সুপারিশ করে ওই প্রতিবেদনে  বলা হয়েছে, বিদ্যমান রুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রায় রেমিট্যান্স না এনে স্বর্ণ নিয়ে আসার ফলে অফিশিয়াল চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমে গেছে।

পড়ুন: আমি প্রবাসী অ্যাপ ভোগান্তি কমাবে।

এই স্বর্ণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভারত ও মায়ানমারে পাচার হয়ে থাকে বলেও দাবি করা হয়। উভয় ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে ব্যক্তিগত ভাবে আমি স্বাগত জানাই। কারণ, এখন ডলার সংকট চলছে। দেখা যাচ্ছে, যারাই বিদেশ থেকে আসছেন সবাই স্বর্ণের বার নিয়ে আসছেন। কিন্তু রেমিট্যান্স আসছে না। তাছাড়া সরকারও বৈধপথে স্বর্ণের বার আমদানিকে উৎসাহিত করতে ডিলার লাইসেন্স দিয়েছে। যদিও সেটি আমদানিবান্ধব নয়।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে প্রবাসীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে বিদেশের দূতাবাসগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

এখন হয়ত সোনাকে ডলার এর বিকল্প বানিয়ে ফেলার প্রবণতা কমবে এ সিদ্ধান্ত আসার পর।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form