জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মমুখী ১৯টি শর্ট কোর্স নিয়ে ওয়ার্কশপ

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা নিশ্চিত করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষতাভিত্তিক পিজিডি ও শর্ট কোর্স চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করছে। 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: এন ইউ


 গাজীপুর: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতাভিত্তিক ১৯টি শর্ট কোর্স প্রবর্তন নিয়ে ‘স্কিল বেইজড শর্ট কোর্সেস অ্যান্ড কারিকুলাম’ শীর্ষক দিনব্যাপী ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার, ২৫ জানুয়ারি সকালে রাজধানীর জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) এই ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে ওয়ার্কশপে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।  

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ১৯টি শর্টকোর্স চালুর যে উদ্যোগ নিয়েছে. সেটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। দক্ষতাভিত্তিক এই শর্ট কোর্সগুলো করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের যেমন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ করে গড়ে তোলতে পারবে, তেমনি দেশে-বিদেশে তাদের কর্মসংস্থানও নিশ্চিত হবে। এসব নতুন উদ্যোগ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক শিক্ষার মান উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

দীপু মনি আরও বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মকে দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার দিকে বেশি নজর দিতে হবে। সেই কাজটিই এগিয়ে নিচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন কোর্সের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধও শিখাতে হবে। এর মধ্যদিয়েই আমরা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। গড়ে তুলবো স্মার্ট বাংলাদেশ।’

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মশিউর রহমান বলেন, ‘দেশের মানচিত্রসম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়ন ও দক্ষ জনশক্তি গড়তে নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সমন্বিত অ্যাপ্রোচ জরুরি। প্রথিতযশা যেসব শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিবর্গ নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন; তাঁদের সকলের সমন্বয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলেই আমাদের মূল লক্ষ্য অর্জিত হবে। একারণেই আমরা দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পিজিডি ও শর্ট কোর্স চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’

মশিউর রহমান বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে অনার্স এবং ডিগ্রি পর্যায়ে পিজিডি ও শর্ট কোর্স চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে পিজিডি কোর্সের সিলেবাস অনুমোদন হয়েছে। আগামী মার্চ মাস থেকে এই কোর্সের কার্যক্রম শুরু হবে। বিষয় বিশেষজ্ঞরা এ কোর্সগুলো প্রণয়ন করেছেন। ১৯টি শর্টকোর্স আমরা প্রবর্তন করতে যাচ্ছি। এর মধ্য থেকে দু‘/একটি বাধ্যতামূলক করা হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে। তারা নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ হবে। যেমনটি আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ইতিহাস চেতনার সঙ্গে উন্নয়নের সম্পর্ক আছে। ইতিহাস জানার মধ্য দিয়ে প্রকৃত উন্নয়ন পরিকল্পনা গৃহীত হতে পারে। ইতিহাস চর্চা শুধু একটি লিবারেল আর্টস বরং এটি উন্নয়নের সোপান। প্রকৃত উন্নয়ন সাধন করতে হলে ইতিহাসের অনুসন্ধান প্রয়োজন। ঠিক তেমনি করে প্রযুক্তিজ্ঞান, সফ্ট স্কিল এখন আর যেকোনো একটি ডিসিপ্লিনের অংশ হতে পারে না। প্রযুক্তিজ্ঞান ও সফ্ট স্কিলের দক্ষতা অর্জন এখন প্রতিটি মানুষের জীবনের অঙ্গ। প্রযুক্তি এখন মানুষের দর্শনের অংশ। সফ্ট স্কিল একটি মানুষকে পরিশীলিত উপায় তৈরি করে। তাকে আত্মনির্ভর ও দক্ষ করে গড়ে তোলে। আজকের ওয়ার্কশপে বিষয় বিশেষজ্ঞগণ পরামর্শ দেবেন ৩৫ লক্ষ শিক্ষার্থী কীভাবে তথ্যপ্রযুক্তি ও সফ্টস্কিলের দক্ষতা অর্জন করে অন্ট্রোপ্রেনার হতে পারে। শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনায় রেখে আধুনিক যুগের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য যা যা করা দরকার তা আমরা করতে চাই। আমরা জ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রযুক্তিনির্ভর প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাই।’

ওয়ার্কশপে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য বিশ্বজিৎ চন্দ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য নিজামউদ্দিন আহমেদ, ট্রেজারার আবদুস সালাম হাওলাদার। রিসোর্স পার্সন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মীজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক এম এম আকাশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন মোহাম্মদ বিন কাশেম, রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন, ডাটা সফ্টের সভাপতি এম মানজুর মাহমুদ। 

ওয়ার্কশপে ১৯টি গ্রুপে ভাগ হয়ে গ্রুপ আলোচনা হয়। এরপর ১৯ জন গ্রুপ লিডার কোর্সগুলোর উপর প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন। ওয়ার্কশপটি পরিচালনা করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকপূর্ব শিক্ষা বিষয়ক স্কুলের ডিন নাসির উদ্দিন। 

নতুন দক্ষতাভিত্তিক ১৯টি শর্ট কোর্স হচ্ছে- ডাটা এনালিস্ট, আর্কাইভ ও রেকর্ড ম্যানেজমেন্ট, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, রেসপনসিভ ওয়েব ডিজাইন, কাস্টমার সার্ভিস স্পেশালিস্ট, অ্যাকাউন্টিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, পারফরমিং আর্টস অ্যান্ড ড্রামা, অন্ট্রোপ্রেনারশিপ, গ্রাফিক ডিজাইন অ্যান্ড অ্যানিমেশন, ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, সোলার পাওয়ার টেকনোলজি, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্লু ইকোনমি, মেন্টাল হেল্থ ফার্স্ট এইড, কনটেন্ট রাইটিং, স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট। এই কোর্সগুলো অনার্স ও ডিগ্রি পর্যায়ে ওপেন থাকবে। 

শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী এই কোর্সগুলো করতে পারবে।  

সূত্র: এনইউ

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form