শবে কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম (নিয়্যত সহ)

হজরত আয়েশা (রা.) মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে  জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘হে রাসূল, শবে কদরের রাতে আমার কোন দোয়াটি পড়া উচিত?' তিনি তাকে পড়ার জন্য নির্দেশ দিলেন: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।’  (সুনানে ইবনে মাজা)

ওপরের দোয়াটির বাংলা অর্থ- ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’

লাইলাতুল কদর বা শবে কদর একটি অত্যন্ত পবিত্র রাত। বা মহিমান্বিত রাত। শব একটি ফার্সি শব্দ। যার অর্থ রাত। আবার লাইলাতুন আরবি শব্দ। এটির অর্থও রাত। কদর আরবি শব্দ। যার অর্থ মর্যাদা। 

এই পবিত্র কদর রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও উপহার বর্ষিত হয়।আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ভাল কাজ ও প্রার্থনা উত্তম। 

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য শবে কদরের রজনিতে মুসলমানরা  গভীর রাত পর্যন্ত নফল নামাজ (বাধ্যতামূলক নয়), কোরআন পাঠ, আল্লাহকে স্মরণ এবং নিজের কৃত গুনাহর জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে থাকেন।

মসজিদে শবে কদরের নামাজ আদায়


আরবিতে শবে কদরের নামাজের নিয়ত (আরবিতে পড়া বাধ্যতামূলক নয়)

‘নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়া'লা রাকআ'তাই ছালাতি লাইলাতিল কদর-নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা’বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।’

অর্থ: আমি কাবামুখী হয়ে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য শবে কদরের দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবর।


শবে কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম (বিশেষ নিয়ম নেই)

শবে কদরে বা লাইলাতুল কদরে বিশেষ কোনো নামাজের নিয়ম বা পদ্ধতি নেই। এই পবিত্র রাতে দুই রাকাত করে নফল নামাজ যত সুন্দর ও মনোযোগ দিয়ে আদায় করা যায় ততই ভালো। দুই রাকাত, দুই রাকাত করে আপনি যত খুশি পড়তে পারবেন। এ নামাজ জামায়াতেও আদায় করা যেতে পারে। 

আল্লাহকে খুশি করার  জন্য বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত এবং তওবা করা যায়। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।

লোকমুখে প্রচলিত আছে, এ রাতের নামাজে বিশেষ কিছু সুরা পড়তে হবে, এসবের কোনো ভিত্তি নেই। এছাড়া নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাত নামাজ পড়তে হবে এমন কথারও ভিত্তি নেই।

কেন ২৭ রমজান রাতকেই শবে কদর মনে করা হয়?

মূলত রমজান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে বেজোড় রাতগুলোর শবে কদর হবার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন- ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯তম রাতগুলোর যে কোনটি শবে কদর হতে পারে।

২৬ রমজান দিবাগত রাতকে সম্মিলিতভাবে রমজানের ২৭তম রাত বা শবে কদর বা লাইলাতুল কদর ধরা হয় যেন সবাই মিলে নামাজ পড়তে পারে।

কারো ভাগ্যে এ রাতের ইবাদত জুটে গেলে এক রাতেই তার ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদত করার পুরস্কার মিলবে।

ভাগ্য রজনী কোনটি?

এ রাতেই প্রথম পবিত্র কুরআন নাজিল হয়। তাই এটি ভাগ্য রজনী। 'শবে কদর' অর্থ মর্যাদার রাত্রি। শবে কদর-এর আরবি হলো 'লাইলাতুল কদর' তথা সম্মানিত রাত্রি। 

সূরা কদর

আয়াত

বাংলা অর্থ

ইন্নাআনঝালনা-হু ফী লাইলাতিল কাদর।

 

আমি একে নাযিল করেছি শবে-কদরে।

 

ওয়ামাআদরা-কা-মা-লাইলাতুল কাদর?

শবে-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন?

লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর।

শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

তানাঝঝালুল মালাইকাতুওয়াররুহু ফীহা-বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমর।

এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে।

ছালা-মুন হিয়া হাত্তা-মাতলাইল ফাজর।

এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।



একটি ফজিলতপূর্ণ দোয়া

‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযিম’ এই দোয়াটি পড়তে পারেন। কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়। 

এই দোয়ার অর্থ: মহান সেই আল্লাহ এবং তারই সকল প্রশংসা। মহান সেই আল্লাহ যিনি সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন—

দুটি বাক্য এমন রয়েছে, যা বলা সহজ, আমলের পাল্লায় অনেক ভারী। আর আল্লাহর কাছেও অধিক পছন্দনীয়। সেটি হলো, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম।


শবে কদরে সারা রাত জেগে থাকতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই। ফজরের নামাজ যেন ছুটে না যায় কিংবা না ঘুমানোর জন্য পরের দিন রোজা পালনে যেন সমস্যা না হয় সেদিকেও নজর দিন।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form