ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়?

ইউটিউব থেকে আয় করা কঠিন নয়। আবার খুব সহজও নয়। ইউটিউবে আয় করতে চাইলে আপনাকে কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। যেমন- কী ধরনের ভিডিও বানানো হবে, ভিডিও গুলোর টার্গেট ভিউযার কারা এসব আগেই ঠিক করা থাকা চাই। 

YouTube Earning
Image: Szabó Viktor, Pexels


ভিডিও আপলোড দিলেন কিন্তু ভিডিও দিয়ে কীভাবে ইউটিউব থেকে আয় করা যায়? প্রথমেই কনটেন্ট প্ল্যান করুন। তারপর একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলুন। ভিডিও আপলোড দিন। তারপর ভিউ ভাল হলে শর্তসাপেক্ষে মনেটাইজ অপশন পাবেন। 
সত্যি বলতে- এভাবেই ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে টাকা আয় করা যায়। 

কীভাবে ইউটিউব থেকে আয় করা যায়?

ইউটিউব থেকে আয় করতে হলে অবশ্যই কিওয়ার্ড সেট করে ভিডিও অপটিমাইজ করতে হবে। এছাড়া আর কী কী করা লাগবে তার প্রক্রিয়া আমরা কয়েকটি ধাপে তুলে ধরছি। 

ইউটিউব থেকে ডলার আয় করার ৫টি ধাপ

ধাপ-১: কনটেন্ট প্ল্যান

বিষয় নির্ধারণ করে নিয়ে ভিডিওর শিরোনাম ও ভিডিও তৈরির বিস্তারিত পরিকল্পনা করে নিতে হবে। কী কী ভিডিও তৈরি করে আপলোড দেওয়া যায় তা আগে থেকেই খাতায় লিখে ফেলা উচিত।  এই পরিকল্পনা থাকলে সফলতা পাওয়া সহজ হয়।


ধাপ-২: ইউটিউব চ্যানেল খোলা

এই পর্যায়ে ইউটিউব চ্যানেল খুলে ফেলুন। চ্যানেলের জন্য একটি মানানসই নাম এবং হ্যান্ডেল পছন্দ করে নিন। চ্যানেল খোলার সময় একটি সুন্দর ব্যানার ডিজাইন করে সেট আপ করে নিন। 


ধাপ-৩: ভিডিও রেকর্ড এবং সম্পাদনা

লোকেশন সেট করে ভিডিও করুন। স্টুডিওতে ভিডিও করার মত ব্যাপার হলে লাইটিং এর ব্যাবস্থা রাখুন। 

গ্রিন স্ক্রিন ব্যবহার করার প্রয়োজন হলে কাগজ এড়িয়ে কাপড় ব্যবহার করুন।

ভিডিও সম্পাদনা করুন স্মার্ট সম্পাদকের মত। অপ্রয়োজনীয় ফুটেজ বাদ দিন। অর্থবোধক ট্রানজিশন দিন। শব্দ সম্পাদনা করুন।

নোট: সম্পাদনার জন্য ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ যা-ই ব্যবহার করুন না কেন অবশ্যই  লাইসেন্সড ভার্সন অ্যাপ ব্যবহার করুন। ছবি, টেক্সট, সাউন্ড বা মিউজিক এবং ভিডিও কোন যেন কপিরাইট অভিযোগে না পড়ে।


ধাপ-৪: ভিডিও আপলোড 

পুরো ভিডিয়ো দেখে সেটি ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড দিন। ভিডিয়ো আপলোড দেওয়ার সময় যথাযথ শিরোনাম দিন। তারপর তথ্যবহুল কিন্তু সংক্ষিপ্ত ডেসক্রিপসন দিন। ভিডিওর সাথে সম্পর্কযুক্ত কিছু ট্যাগ বা কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন।


ধাপ-৫: ভিডিও মনেটাইজ করা

ভিডিও আপলোডের পর সেটার একটু গ্রহণযোগ্য প্রচার প্রচারণা চালান। ভিউ ভাল হলে মনেটােইজেশন অন করুন। এক্ষেত্রে আপনি ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। আপনার একটি এডসেন্স একাউন্ট লাগতে পারে।

বিকল্প উপায়েও ইউটিউব ভিডিও মনেটাইজ করা যায়। নিচে অন্য প্যারাগ্রাফে সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে।


যা কিছু করা যাবে না

অনলাইন ইনকাম সহজ কিন্তু ভিডিওর ভিউ কিংবা ওয়াচটাইম কেনা যাবে না। লাইক কমেন্ট শেয়ার কেনা বা বিনিময় করা যাবে না।

নিজের ভিডিও নিজে বেশি দেখা যাবে না।

ভুল করেও অন্যের কনটেন্ট চুরি করতে যাবেন না। তাহলে আয় তো দূরে থাক আপনার চ্যানেল  বন্ধ হয়ে যাবে । পেমেন্ট যাবে আটকে।

ভিডিও যেন বেআইনি না হয়। অথবা ভিডিওর কোন অংশই যেন বে-আইনি, ক্ষতিকর এবং ইউটিউব পলিসি সাপোর্ট  করে না এমন বিষয়কে প্রমোট না করে।


প্রতি ভিডিওর জন্য ইউটিউব কত টাকা দেয়?

সত্যি বলতে ইউটিউব আপনার ভিডিওর জন্য টাকা দিবে না। তারা ভিডিও প্রতি টাকা দেয় না। তারা চায় ভাল ভিডিও এবং তার দারুন সংখ্যক ভিউ।

ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয়? প্রতি ১০০০ ভিউতে ১০০ টাকা পাওয়া যেতে পারে। এটি ৩০০ টাকা বা ৫০০ টাকাও হতে পারে। তবে এটির কোন সরাসরি ফিগার নেই। কারণ বিষয়, ভিডিও কোয়ালিটি এবং অডিয়েন্স এর লোকেসন বিভিন্ন বিষয় এর উপর ভিত্তি করে ইউটিউব টাকা দেয়। অনেকে বলেন, ৩ থেকে ৫ ডলার দেয় ইউটিউব। তবে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে ঠিক কত টাকা ইনকাম হবে ইউটিউব ভিডিওর প্রতি ১০০০ ভিউ থেকে।


ইউটিউব চ্যানেল খুলতে কী কী লাগবে?

একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলার জন্য প্রথমেই যা দরকার হবে তা হলো- একটি জিমেইল একাউন্ট আইডি।

প্রথমেই জিমেইল আইডি দিয়ে ইউটিউব একাউন্ট খোলা লাগবে।

সহজ উপায়- জিমেইলে লগ-ইন করা অবস্থায় ইউটিউব ওয়েবসাইটে ভিজিট করলে  ইউটিউব সাইন-আপ হয়ে যায়।

জিমেইল একাউন্ট খোলার জন্য পূর্ণ নাম, জন্ম তারিখ, ফোন নম্বর লাগবে।


ইউটিউব ভিডিও মনেটাইজ করার শর্ত

ভিডিও মনেটাইজেশনের জন্য প্রাথমিক শর্ত হলো- আপনার বয়স ১৮ বছর হতে হবে। কারণ ১৮ বছর বয়সের আগে সবাইকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। তখন পড়ার সময় ইনকাম করার বয়স না।

দ্বিতীয় শর্ত হলো- ভিডিও ভিউ ৪০০০ হাজার ঘণ্টা হতে হবে শেষ ১২ মাসে।

তৃতীয় শর্ত হলো- চ্যানেলের গ্রাহক হতে হবে অন্তত ১০০০।

সর্বশেষ শর্ত হিসেবে এডনেন্স একাউন্ট এর কথা বলতে পারি। কারণ ইউটিউব এর বিজ্ঞাপনগুলো এডসেন্স দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার জন্য ঠিকানা ও ব্যাংক নেম, একাউন্ট নাম্বার, ব্রাঞ্চ, ইত্যাদি তথ্যও থাকা চাই। টিআইএন নাম্বার লাগতে পারে ট্যাক্স রিটার্ন দিচ্ছেন কিনা তা প্রমাণ করার জন্য।

এসব শর্ত পূরণের জন্য চালাকির আশ্রয় নেওয়া যাবে না। শর্তগুলো ন্যাচারালি অর্জন করতে হবে। 


ইউটিউব ভিডিও মনেটাইজেসনের বিকল্প উপায়

একই সাথে বিকল্প উপায়গুলো দ্বারা ইউটিউব ভিডিও মনেটাইজ করলে তার ফলে মূল মনেটাইজেসন উৎস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। 

যদি ইউটিউব আপনার ভিডিও মনেটাইজ না করে কিংবা আপনার ভিডিওতে ইনকাম অনেক কম আসে। তখন আপনি বিকল্প উপায়ে মনেটাইজ করতে পারেন আপনার ভিডিওগুলো। যেমন-আপনি কোন পণ্যের স্পন্সরশিপ নিতে পারেন। বা এফ্যিলিয়েট লিংক শেয়ার করতে পারেন।

ইউটিউব কেন ভিডিওর জন্য টাকা দেয়?

মূলত ইউটিউব আপনার ভিডিওর কোন অংশে বা পৃষ্ঠায় বিজ্ঞাপন প্রচার করে। এটি থেকে তারা যে অর্থ আয় করে তার একটি অংশ ভিডিও নির্মাতা হিসেবে আপনাকে দেয় তারা।

ইউটিউব ইনকাম কি হালাল?

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও যদি হালাল হয় এবং বিজ্ঞাপনটি যদি হালাল বিষয়ের হয় এবং এগুলোর নির্মাণ যদি হালাল উপায়ে হয়- তাহলে ইউটিউব থেকে আয় হালাল হবার কথা।

ইউটিউব ভিডিয়ো বিজনেস হালাল কি না এই বিষয়ে আমরা খুব জটিল না হয়ে সহজভাবে চিন্তা করি।  ভিডিও যদি গ্রহণযোগ্য হয় এবং বিজ্ঞাপনও যদি গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে অসুবিধা নেই। এটি দেখা লাগবে বৈশ্বিক, স্থানীয় ও ইসলামিক/নিজস্ব ধর্মীয় আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে।

ইউটিউব চ্যানেল খুলে টাকা ইনকাম করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় দুর্দান্ত আইডিয়া। ভিডিও যদি অরিজিনাল না হয় এবং পাবলিক সেটা না গিলে তাহলে সফলতা অনেকটাই দূরে থাকে। আমরা দেখিয়েছি কোন কোন ধাপ অনুসরণ করে ইউটিউব থেকে ইনকাম করা যায়। সেসব ধাপ ফলো করলে আপনার ইউটিউব আয় সহজ হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form