"জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশিদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে”

জলবায়ু সংকট আরও খারাপ হওয়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং চরম বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়তে থাকবে, যা বিশ্বব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্যের উপর আরও বেশি প্রভাব ফেলবে।

Climate Change
Image: Pixabay, Pexels


ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে , উচ্চ তাপমাত্রা, আর্দ্রতা বৃদ্ধি এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর ফলে বন্যার প্রভাবে মানুষের উদ্বেগ এবং হতাশাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

সমীক্ষাটি ২০১৯ এবং ২০২০ সালে দুই মাস মেয়াদে পরিচালিত হয়েছিল এবং শহর ও গ্রামীণ উভয় ক্ষেত্রে ৭০০০ জন নাগরিকের উপর জরিপ করা হয়েছিল। গবেষকরা তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং বন্যা, জলবায়ু পরিবর্তনভিত্তিক পরিমাপ করেছেন  ৪৩টি আবহাওয়া স্টেশনে ।  বৈশ্বিক উষ্ণতার সাথে সম্পর্কিত আবহাওয়ার পরিবর্তন  বিষয়গুলি মানসিক স্বাস্থ্য কীভাবে প্রভাবিত হয়েছিল তা মূল্যায়ন করতে এই ডেটা ব্যবহার করেছেন।

ফেব্রুয়ারি ৬ তারিখের ফলাফল অনুযায়ী, বিগত দুই মাসের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির ফলে উদ্বেগজনিত ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা ২১শতাংশ বেশি এবং বিষন্নতা হওয়ার সম্ভাবনা ২৪ শতাংশ বেশি। প্রতি ঘনমিটার বাতাসে এক গ্রাম আর্দ্রতা বৃদ্ধির ফলে উদ্বেগ এবং বিষন্নতা  হওয়ার সম্ভাবনা ৬ শতাংশ বেশি। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ,জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারনে বন্যার ফলে হতাশার সম্ভাবনা ৩১ শতাংশ, এবং উদ্বেগজনিত সম্ভাবনা ৬৯ শতাংশ এবং উভয়ই একসাথে ৮৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

গবেষণার প্রধান লেখক, সৈয়দ শাবাব ওয়াহিদ এই ফলাফলকে "আশংকাজনক" বলে অভিহিত করেছেন এবং সতর্ক করেছেন যে ,এটি অন্যান্য জাতির জন্য সতর্কতা হিসাবে কাজ করতে পারে। তিনি বলেছেন্, জলবায়ু সংকট আরও খারাপ হওয়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং চরম বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়তে থাকবে, যা বিশ্বব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্যের উপর আরও বেশি প্রভাব ফেলবে।

 ২০২২ সালের জুনে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) একটি নীতি সংক্ষিপ্ত প্রকাশ করেছে যাতে সমস্ত দেশকে তাদের সংকট মোকাবেলার পরিকল্পনায় মানসিক স্বাস্থ্যকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়।

ওয়াহিদ এবং তার দল  গবেষণায় পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য দুটি ধাপের রূপরেখা দিয়েছেন। তারা কমিউনিটি-ভিত্তিক হস্তক্ষেপের বিকাশ ও মূল্যায়ন করার পরিকল্পনা করে্ন, যা বাংলাদেশের জন্য সাংস্কৃতিকভাবে উপযুক্ত, যেমন জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা প্রভাবিত সম্প্রদায়ের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করবে। তারা বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী আরও গবেষণা করার পরিকল্পনা করেছেন।

 মানসিক স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় হস্তক্ষেপ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির মুখোমুখি হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জকে তুলে ধরেছে গবেষণাটি। গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় খরচের ফলে দেশটি ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য আর্থিক সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়েছে, যা বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে আরও  গুরুতর হয়ে উঠেছে। বিশ্বব্যাংকের  প্রেস রিলিজ অনুযায়ী,  গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশকে গড়ে ১ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়।

 বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের উপর এই গবেষণাটি অন্যান্য দেশের জন্য একটি সতর্কতা হিসাবে কাজ করবে এবং সমস্যা মোকাবেলায় আরও বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরবে।  জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি সুদূরপ্রসারী এবং আমাদের মানসিক সুস্থতাসহ আমাদের জীবনের সমস্ত দিককে স্পর্শ করে।  বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বর্তমান গতিপথ এবং এর পরিণতিগুলি পূর্বের  চেয়ে আরও বেশি গুরুতর হতে পারে,  এর প্রভাবগুলি হ্রাস করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া আগের চেয়ে  গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

তাজরিন

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form