ভিসির ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যে উত্তাল বাকৃবি
সুন্দরী নারী আর টাকা হলেই চাকরি মেলে- এমন অভিযোগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্যের (ভিসি) পদত্যাগ দাবিতে কয়েকদিন ধরেই আন্দোলন চলছে ক্যাম্পাসে।
চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে রোববার একদিকে ভিসির পদত্যাগ দাবিতে মানববন্ধন করেছে আওয়ামীপন্থি গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের শিক্ষকরা।
অপরদিকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মানে আঘাত করার প্রতিবাদে ভিসির পক্ষে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বাকৃবি প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ড।
এক নারীর সঙ্গে অডিও ক্লিপ কেলেঙ্কারির অভিযোগকে অস্বীকার করে ও নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভিসি অধ্যাপক ড. রফিকুল হক।
ভিসির পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নেয়াদের নানা কর্মসূচিতে মূলত উত্তাল হয়ে উঠেছে বাকৃবি ক্যাম্পাস।
রোববার বেলা ১১ টায় ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে মানববন্ধন আয়োজন করে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম শামসুদ্দীন, অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবু হাদী নূর আলী খান প্রমুখ।
গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম থেকে ভিসিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শিক্ষকরা। বক্তব্যে শিক্ষকরা বলেন, ‘বর্তমান ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত শিক্ষকদের আন্দোলন চলতে থাকবে। আজকের (রোববার) মধ্যে পদত্যাগ না করলে আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হবে।
এদিকে, ভিসিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করে তার সম্মানে আঘাত করায় একই সময়ে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বাকৃবি প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ড। মানববন্ধনে প্রায় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা, কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করে। পরে দুপুর ১ টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. রফিকুল হককে ঘিরে যে অপপ্রচার তা কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের অশালীন কর্মকাণ্ড। সাইবার ক্রাইমে জড়িত এসব ব্যক্তির শাস্তির দাবি করছি। একজন মুক্তিযোদ্ধার সম্মানে আঘাত করা মানে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অবমাননা করা। মুক্তিযোদ্ধার চেতনাকে জাতির কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করছি।
চলমান বিষয়ে ভিসির বক্তব্য: আমাকে যে অপবাদ দেয়া হয়েছে তার সঙ্গে আমি মোটেও জড়িত নই। আমি নিজে চিন্তাও করতে পারি না আমাকে এ অভিযোগ দেয়া হবে। যাদের অপকর্ম, স্বার্থকে হাসিল করতে পারি নাই তারাই আমার বিরুদ্ধে এ ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে।
সম্প্রতি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভিসি বলেন, ‘শূন্যপদে এবং যারা অতীতে আওয়ামী লীগ করেও চাকরি পায়নি তাদের একটি কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যারা আমার বিরুদ্ধে সিডি বের করেছে তাদের উদ্দেশ্য কি? যেসব লোকদের প্রতিনিধি নিয়োগ পায়নি, যারা আমাকে সরিয়ে ভিসি পদে আসতে ইচ্ছুক তারাই সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে আমার মান সম্মান নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। যে মেয়েকে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে তাকে উৎখাত করা হয়েছে। আমি মানুষকে বিশ্বাস করতাম। তারা আমার বিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কোন অপশক্তির পক্ষে আমি কখনোই কমপ্রোমাইজ করিনি বলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। যারা আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার করেছে তাদের নামে আগামীকাল (সোমবার) মামলা করা হবে।
উল্লেখ্য, ভিসির নৈতিকতা সম্পর্কিত কিছু অডিও ক্লিপ এবং স্থিরচিত্রের একটি সিডি সম্প্রতি শিক্ষকদের হস্তগত হয় বলে প্রচার হয়। ওই সিডির পরিপ্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের শিক্ষকরা ভিসি পদত্যাগের দাবিতে গেল ১৮ মার্চ থেকে আন্দোলন শুরু করে।