বাঘের গর্জন আবার!
আকাশ কি আজ মেঘলা থাকবে? সূর্য কি বিলম্বে মুখ দেখাবে? অনেক কিছুই হতে পারে আজ! বৃষ্টি হতে পারে, রোদ উঠতে পারে; কিন্তু একটা ব্যাপারের ব্যত্যয় ঘটবে না। আজ বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষ এক স্বপ্ন নিয়েই ঘুম থেকে জেগে উঠবেন! আর সেটা হলো—ভারতকে হারিয়ে ইতিহাসের আরেক প্রাচীর ধসিয়ে দেয়ার স্বপ্ন!
বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ জড়তা কাটিয়ে ফেলেছে। প্রথমবারের মতো আজ জাতীয় ক্রিকেট দল খেলছে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে। এবার ইতিহাসের আরও একটা ধাপ এগিয়ে যাওয়ার পালা, সেমিফাইনালে ওঠার পালা। এই সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন নিয়েই আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে নয়টায় দুনিয়ার সবচেয়ে নামি ক্রিকেট স্টেডিয়াম, মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ভারতের মুখোমুখি হবে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
এই ম্যাচের সময়সূচি ঠিক হওয়ার পর থেকেই বারবার আলোচনায় আসছে ২০০৭ বিশ্বকাপ এবং ২০১২ এশিয়া কাপে দু’দলের লড়াই। দু’বারই বাংলাদেশ শক্তিধর ভারতীয় দলকে বিদায় করে দিয়েছিল দুই আসর থেকে। আজ যখন আরেকটা বড় ম্যাচ, বলা ভালো বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ম্যাচে ভারত ও বাংলাদেশ মুখোমুখি, তখন মাশরাফিদের প্রধান অনুপ্রেরণা হবে স্মৃতি হয়ে যাওয়া এই দুই ম্যাচ।
যদিও ভারত ও বাংলাদেশ দুই পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে, ওই পুরনো ঘটনা নিয়ে খুব একটা ভাবছেন না তারা। ভারতের হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা সুরেশ রায়না বললেন, তারা সামনের দিকে তাকাতে চান। আর বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফির অভিমত, স্মৃতি মধুর হলেও তা মাঠে কাজে লাগে না। তিনি বরং নিজেদের চলমান পারফরম্যান্স থেকেই অনুপ্রেরণা নেয়ার পক্ষে। বললেন, ‘আমরা এখন নিজেদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স থেকেই অনুপ্রেরণা নিতে পারি। দল ভালো করছে, এটাই তো বড় অনুপ্রেরণা। সবাই পারফর্ম করছে। তরুণ খেলোয়াড় যারা আছে, তারা পারফর্ম করছে। ২০০৭ সালের ভারত দলও অনেক ভালো ছিল। অনেক গ্রেট ক্রিকেটার ছিল। শচীন ছিল, সৌরভ ছিল, শেওবাগ ছিল। তবে আমি মিলাতে চাই না এই কারণে যে এগুলো মাঠের পারফরম্যান্সে কোনো প্রভাব ফেলে না। এটা শুধুমাত্র সুন্দর স্মৃতি। কিন্তু মাঠে এটা কোনো সাহায্যই করে না।’
মাঠের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কী হবে, সেটা সময়ই বলবে। আপাতত কাগজ-কলমের হিসাব কষলে ভারত বেশ এগিয়েই মাঠে নামবে। তারা বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন এবং এখন পর্যন্ত চলতি বিশ্বকাপে অপরাজিত। ফলে দলটির সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই। তবে মাশরাফি নিজেই পরিষ্কার করে বলে দিলেন, ‘এসব কাগজ-কলম ভারতের হয়ে মাঠে নামবে না। মাঠে দু’দলই খেলা শুরু করবে সেই শূন্য থেকে। ফলে নতুন দিনে যে ভালো খেলবে, সে-ই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে।’
বাংলাদেশ পক্ষের আশা নিশ্চয়ই দিনটা তাদের ভালোই যাবে। সেই ভালো দিন যাওয়ার একটা বড় শর্ত, উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের একটা ভিত গড়ে দেয়া। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা রানেই আছেন। ভরসা হয়ে জ্বলছেন তিন পেসারও। মেলবোর্নের এই বৃহত্তম মাঠে একটা বড় দুশ্চিন্তা হতে পারে ফিল্ডিং এবং এক ও দুই রান বের করা। যতদূর জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে এই বড় মাঠকে বিবেচনায় রেখেই বিশেষ অনুশীলন করছে বাংলাদেশ দল।
এদিকে বাংলাদেশের একাদশে আজ একটি পরিবর্তন সুনিশ্চিত—অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা দলে আসছেন। আগের ম্যাচে বিশ্রামে থাকা মাশরাফিকে জায়গা করে দিতে বাইরে যাচ্ছেন হয়তো তাইজুল ইসলাম। সে ক্ষেত্রে একাদশে থাকার লড়াই হবে নাসির, তাইজুল ও আরাফাত সানির মধ্যে। তবে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত সাকিব এবং নাসির-রিয়াদ স্পিনের ওপরে ভরসা রেখে আট ব্যাটসম্যান ও তিন পেসার খেলানোর পথেই যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।