ভালোবাসা, ভালোবাসা…
সেদিন ছিলো রবিবার। বসন্তের বিকাল, এমনিতেই মন-মেজাজ চনমনে, ফুরফুরে। বসন্তের দখিনা বাতাসে মনকে সতেজ করে তুলছে। সবে মাত্র কোচিং থেকে এসেছে বাদল। সে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স(সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
ক্লাস শেষ করে রুমে ঢুকতেই কানে ভেসে এলো বসন্তের গান। বাদলের অবশ্য শিল্প সাহিত্যের প্রতি আলাদা অনুরাগ ছিলো। সেই সুর তার পকেটে বাজছে। তার মানে ফোন থেকে ভেষে আসছিল গানটি। ওটা ছিলো বাদলের রিংটোন। ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে শান্ত স্নিগ্ধ গলায় ভেসে এলো পড়তে যাবে কখন? যাবার সময় আমাকে নিয়ে যেয়ো। অবাক হয়ে উত্তরে বাদল বললো,‘পড়তে তো যাবো না, মাত্র পড়িয়ে আসলাম’।
সহসা বুঝতে পেরে দু:খিত বলে রেখে দিল ফোনটা। তবে বাদলের মনে কোন অনুভূতি না হলেও ভাবলো একটু যে, পড়ানো আর পড়া বেশি পার্থক্য নয়। দুটোর অবস্থান খুব কাছাকাছি। অর্থাৎ পরস্পর সম্পর্কিত। না পড়লে পড়াবে কে ? আর না পড়ালে পড়বেই বা কে ? বিষয়টা ভেবেই ভালো লাগলো বাদলের। ভাবতে ভাবতেই জুতো মোজা খুললো বাদল।
কৌতূহলি মন বাদলকে নাড়া দিলো নিজেই নিজেকে বললো কি অদ্ভুদ আমি? একবার ও জানতে চাইলাম না সে কে ? কাকেই বা পড়তে যেতে বলছে? নিজের কৌতূহল মেটানোর জন্য বাদল ফোন দিলো। কোন উত্তর নাই।
কিছুক্ষণ পর আবার ফোন বেজে উঠলো। ধরতেই সরু গলার আওয়াজ কানে ভেসে উঠলো। ভাইয়া ফোন দিয়োছলেন? হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলো বাদল। জানতে চাইলো আপনি কে? কোথা থেকে আপনি ফোন দিয়ছিলেন? উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন! আপনি কি অদ্ভুত ভাইয়া। তখন আপনি হঠাৎ কি সাবলীল ভাবেই উত্তর দিলেন পড়তে যাবো না পড়িয়ে আসলাম।
কিন্তু বাদল তাকে আবার সেই প্রশ্ন আবার করলো আপনি কে? খুব শান্ত ভাবেই বললো আমি নেহা। পড়াশোনা করছি এতটুকুই থাক আর কিছু না। বাদল বললো আমিতো আর তেমন কিছু বেশি জানতিই চাইনি নেহা। নেহা তাহলে ভালো থাকো ! এই বলে ফোনটা রেখে দেয় বাদল।
বসন্ত প্রায় শেষ। ফোন বেজে ওঠে বাদলের। রিসিভ করতেই শোনে ভাইয়া ক্যামন আছেন? আমি নেহা বলছি, আমাকে চিনতে পারছেন?
ভালো বলে উত্তর দিলো বাদল এবং কেমন আছে জানতে চাইলেই নেহা বলে,‘ভাইয়া আমি আপনার জুনিয়র আমাকে আপনি বললে খারাপ লাগবে, তুমি করেই বললে ভালো হয়। কথার এক পর্যায়ে নেহা বাদলের কাছ থেকে জানকে পারে সে রাজশাহীতে কলেজে পড়েছে। নেহা বলে ভাইয়া আমি কিন্তু ওখানেই পড়ছি।
দুজনের স্মৃতির নিকটবর্তী হবার কারণে বাদল ও নেহার ফোনালাপটা চলতে থাকে অনেক সময় এমনকি অনেক দিন।
মাঝখানে দুমাস-তিনমাস পরে পরে ফোনে কথা হয় তাদের। ভালোলাগা না ভালোবাসা সেই ব্যখ্যারা প্রয়োজন তাদের কাছে তখন থাকে না। কবিতা আবৃত্তি নানা স্মৃতির প্রতিফলনই ঘটে তাদের কথায়।
এভাবে দীর্ঘ তিন বছর পার করে দুজনে। এদিকে বাদলের অনার্স শেষ। এই তিন বছরের মধ্যে সামান্য ভালোলাগা থেকে ভালোবাসায় রুপান্তরিত হয়েছে যা দুজনের কেউ স্বীকার করে না।
হঠাৎ করেই বাদল নেহার কাছে সত্য জানতে চাই। যদিও সে কিছুই মনে করে জানতে চাইনি। তার পরও নেহা নিজে তার কথা বলে ভাইয়া এ যাবৎ যা বলেছি তার অধিকাংশ ছিলো মিথ্যা।…………
আকিদুল ইসলাম